Saturday, October 27, 2012

একাত্মতার উৎসব আর উৎসবের একাত্মতা


এবারে পূজা এবং ঈদ একসাথে আসায় বাঙালির সাম্প্রদায়িক রূপটি ভালো করে জানা গেলো। গুটি কয়েক বিছিন্ন ঘটনা আর হাতেগোনা ক’জন প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তির আচরণ ও মন্তব্যে প্রায়ই নিজেকে নিজের সমাজকে ভুল বুঝি। একবারও বিশ্লেষণ করে দেখি না ভেতরে কী আছে। অবশ্য অনেক সময় পরখ করে দেখার সুযোগও হয় না, তার পূর্বেই আমাদেরকে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হয়।
অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সময়ে কোলকাতায় সংঘটিত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ঘটনা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ভেঙ্গে দেয়। ইচ্ছে করলেই আমরা সেই ক্ষত ভুলে যেতে পারতাম কিন্তু ইতিহাস আমাদেরকে তা হতে দেয় নি। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকরা আমাদেরকে সেরকম ভাবার সুযোগ দেন নি। ভাষা ও সংস্কৃতির ঐক্যবন্ধনকে ভূলুণ্ঠিত করে তারা ভারতবর্ষকে বিভক্ত করেছেন সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে, যা মাত্র তেইশ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ একাত্তর সাল পর্যন্ত টিকে ছিলো।
আমরা কি শান্তি বুঝি না? আমরা কি সহাবস্থান বুঝি না? দেশের অধিকাংশ মানুষই কি সম্প্রীতিতে অভ্যস্ত নন? ইতিহাস আমাদেরকে বারবার এই সাক্ষ্য দিয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক  সহিংসতা ধর্মের কারণে হয় নি, হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। অথচ বারবার উপস্থাপিত হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে। সেটাকে বড়জোড় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব বলা যায়, কিন্তু কোন অর্থেই তা সাম্প্রদায়িক নয়।
ঈদে পুজোয় ইফতারে বাঙালিকে কি আলাদা করা যায় তাদের সাম্প্রদায়িক নাম দিয়ে? ইফতারের মুহূর্তে কতজন বাঙালিকে ইফতার না করতে দেখা যায়? পুজোর সময়ে ঢাক-ঢোল আর খোল-করতালের শব্দে কার মনে দোলা লাগে না, বলুন তো? ঈদের আনন্দে কোন বাঙালিকে নিরানন্দ বা বিচ্ছিন্ন দেখা যায়? অবশ্য বড়দিন উদযাপনকারীদের সংখ্যা নিতান্তই এক শতাংশের কম বলে তারা আমাদেরই সাথে একাকার হয়ে আছেন।
আমি আমার অনেক অমুসলিম বন্ধুকে সংখ্যাগরিষ্টদের ভাষায় ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে শুভেচ্ছা জানাতে দেখেছি। আবার অমুসলিম পরিবেশে আমার মুসলিম বন্ধুদেরকে হাতজোর করে নমস্কার জানাতেও দেখেছি।
প্রতিটিবার উৎসব আমাদেরকে এক করে দেয়। প্রতিটি উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ইতিহাস সংস্কৃতি দেশ ও জাতি হিসেবে আমরা সকলেই এক এবং অভিন্ন।  উৎসবপ্রিয় বাঙালি উৎসবের ফুরসৎ পেলেই সকল বিভক্তি ভুলে যায়। ঈদে বলে ঈদ মোবারক আর পুজায় বলে শুভ বিজয়া। কেন দু’একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত নিয়ে নিজের সমাজকে দূষিত করি? উৎসব এসে আমাদেরকে যে ঐক্যের বন্ধনে বেঁধে দিয়ে যায়, চলুন না কেন সেটাকেই সারাটি বছর ধরে রাখি?

No comments:

Post a Comment