অনুবাদ: মাঈনউদ্দিন
মইনুল
ভাবি আমি, ফিরে গিয়ে
হয়ে যাই প্রাণী,
বাস করি প্রাণীদের সাথে,
তারা কত শান্ত আর আত্মতৃপ্ত,
আমি থেমে গিয়ে প্রাণীদের
দিকে তাকিয়ে থাকি দীর্ঘসময়।
তারা তো ক্লান্ত হয়
না
নিজেদের অবস্থা নিয়ে
করে না কোন অভিযোগ,
তারা তো রাতের আঁধারে
জেগে থেকে
নিজেদের পাপ নিয়ে করে
না ক্রন্দন,
তার তো ঈশ্বরের প্রতি
কর্তব্য নিয়ে
কথা বলতে বলতে অন্যকে
অসুস্থ করে না,
তাদের মধ্যে কেউ তো
নেই অসন্তুষ্ট
কেউ তো নেই পাওয়ার লোভে
মত্ত,
তারা তো একে অন্যের
সামনে হাঁটু গেরে বসে না
অথবা স্মরণ করে না সহস্র
বছর পূর্বের কোন স্বজাতিকে,
তারা তো সমগ্র পৃথিবীতে
সম্মানীত নয়, অসন্তুষ্টও নয়।
এভাবে তারা আমার সাথে
তাদের অভিন্ন সম্পর্ককে প্রকাশ করে
আর আমি তা করি গ্রহণ,
তারা আমার চিহ্নগুলো
বহন করে,
সরলভাবে নিজের বলে প্রমাণ
করে।
আমি ভাবি, কোথায় পেলো
তারা আমার চিহ্নগুলো,
তাদের রাস্তায় কি আমি
বহুকাল পূর্বে হেঁটেছিলাম,
আর অবহেলায় রেখে এসেছিলাম
আমার চিহ্নগুলো?
চিরকালের জন্য অতঃপর
আমি
এগিয়ে এসেছিলাম সামনে,
সঞ্চিত করেছিলাম আরও,
এবং
গতিময়তার সাথে প্রকাশ
করেছিলাম আরও,
বন্ধনহীন আর অভাবহীন
আমি, এবং
এই প্রাণীদের সাদৃশ্য
নিয়ে।
নিজের স্মৃতির স্পর্শ
থেকে খুব দূরে না গিয়ে,
এখানে যা ভালবেসেছি
তাকে মেনে নিয়ে,
এখন আমি ভ্রাতৃবন্ধনে
তার সাথে এগিয়ে যাই।
একটি ত্যাজী ঘোড়ার বৃহৎ
সৌন্দর্য্য, আমার আদরে
সতেজ হয়ে সচকিয়ে ওঠে,
মাথা তার কপালের দিকে
উঁচু
আর দু’কানের মাঝে প্রশস্থ,
অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো চকচকে
আর কোমল
লেজ তার ভূমিতে ধূরি
ঝাড়ে,
চোখগুলো দুষ্টুতায় ঝলঝল
করে,
কানগুলো সুন্দর আকারের,
উন্মুক্তভাবে নড়াচড়া করে।
আমার দু’পায়ের গোড়ালির আলিঙ্গনে
প্রসারিত হয়ে ওঠে তার
নাসারন্ধ্রগুলো,
তার সুগঠিত প্রত্যঙ্গগুলো
কেঁপে ওঠে
যেই দৌড়াতে শুরু করি।
কিন্তু এক মুহূর্ত দৌড়াতেই
আমি ছেড়ে দেই,
ঘোড়া তোমাকে,
তোমার ক্ষিপ্রতার কী
প্রয়োজন
যখন আমি নিজেই পারি
দৌড়াতে?
দাঁড়ালে এমনকি বসে থাকলেও
আমি তোমার চেয়ে ক্ষিপ্রতর।
কবি সম্পর্কে: আমাদের সাম্যের কবি কাজী নজরুলকে বিভিন্ন জায়গায় ‘বাংলার হুইটম্যান’ বলে যে উল্লেখ করা হয়, তা যথার্থই। ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২) সাম্য, গণতন্ত্র আর অধিকারের গান গেয়েছেন তার সমস্ত কবিতায়। তার ‘সং অভ্ মাইসেল্ফ’ মলূত সং অভ্ হিউম্যানিটি, মানবতার গান। ওটি হুইটম্যানের ব্যক্তিগত জীবনগাঁথা নয়। তিনি গেয়েছেন আদর্শবাদ আর সার্বজনীনতার গান। হুইটম্যান মানবতার কবি (Poet of Humanity), যেমন আমাদের নজরুল। ‘ঘাস’ হুইটম্যানের একটি প্রিয় রূপক। বস্তুত তার বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘লিভস অভ্ গ্রাস’ (১৮৫৫)। মজার ব্যাপার হলো, এ কাব্যগ্রন্থটি হুইটম্যান
দশবার সংশোধন করে দশবারই প্রকাশ করেছেন। জীবনের দুর্দশার কারণেও হুইটম্যান আর নজরুল
এক ঘরানার কবি। হুইটম্যান সম্পর্কে এতকিছু বলার আছে যা এখানে শেষ করা যায় না।
No comments:
Post a Comment