Saturday, October 27, 2012

একাত্মতার উৎসব আর উৎসবের একাত্মতা


এবারে পূজা এবং ঈদ একসাথে আসায় বাঙালির সাম্প্রদায়িক রূপটি ভালো করে জানা গেলো। গুটি কয়েক বিছিন্ন ঘটনা আর হাতেগোনা ক’জন প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তির আচরণ ও মন্তব্যে প্রায়ই নিজেকে নিজের সমাজকে ভুল বুঝি। একবারও বিশ্লেষণ করে দেখি না ভেতরে কী আছে। অবশ্য অনেক সময় পরখ করে দেখার সুযোগও হয় না, তার পূর্বেই আমাদেরকে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হয়।
অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সময়ে কোলকাতায় সংঘটিত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ঘটনা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ভেঙ্গে দেয়। ইচ্ছে করলেই আমরা সেই ক্ষত ভুলে যেতে পারতাম কিন্তু ইতিহাস আমাদেরকে তা হতে দেয় নি। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকরা আমাদেরকে সেরকম ভাবার সুযোগ দেন নি। ভাষা ও সংস্কৃতির ঐক্যবন্ধনকে ভূলুণ্ঠিত করে তারা ভারতবর্ষকে বিভক্ত করেছেন সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে, যা মাত্র তেইশ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ একাত্তর সাল পর্যন্ত টিকে ছিলো।
আমরা কি শান্তি বুঝি না? আমরা কি সহাবস্থান বুঝি না? দেশের অধিকাংশ মানুষই কি সম্প্রীতিতে অভ্যস্ত নন? ইতিহাস আমাদেরকে বারবার এই সাক্ষ্য দিয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক  সহিংসতা ধর্মের কারণে হয় নি, হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। অথচ বারবার উপস্থাপিত হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে। সেটাকে বড়জোড় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব বলা যায়, কিন্তু কোন অর্থেই তা সাম্প্রদায়িক নয়।
ঈদে পুজোয় ইফতারে বাঙালিকে কি আলাদা করা যায় তাদের সাম্প্রদায়িক নাম দিয়ে? ইফতারের মুহূর্তে কতজন বাঙালিকে ইফতার না করতে দেখা যায়? পুজোর সময়ে ঢাক-ঢোল আর খোল-করতালের শব্দে কার মনে দোলা লাগে না, বলুন তো? ঈদের আনন্দে কোন বাঙালিকে নিরানন্দ বা বিচ্ছিন্ন দেখা যায়? অবশ্য বড়দিন উদযাপনকারীদের সংখ্যা নিতান্তই এক শতাংশের কম বলে তারা আমাদেরই সাথে একাকার হয়ে আছেন।
আমি আমার অনেক অমুসলিম বন্ধুকে সংখ্যাগরিষ্টদের ভাষায় ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে শুভেচ্ছা জানাতে দেখেছি। আবার অমুসলিম পরিবেশে আমার মুসলিম বন্ধুদেরকে হাতজোর করে নমস্কার জানাতেও দেখেছি।
প্রতিটিবার উৎসব আমাদেরকে এক করে দেয়। প্রতিটি উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ইতিহাস সংস্কৃতি দেশ ও জাতি হিসেবে আমরা সকলেই এক এবং অভিন্ন।  উৎসবপ্রিয় বাঙালি উৎসবের ফুরসৎ পেলেই সকল বিভক্তি ভুলে যায়। ঈদে বলে ঈদ মোবারক আর পুজায় বলে শুভ বিজয়া। কেন দু’একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত নিয়ে নিজের সমাজকে দূষিত করি? উৎসব এসে আমাদেরকে যে ঐক্যের বন্ধনে বেঁধে দিয়ে যায়, চলুন না কেন সেটাকেই সারাটি বছর ধরে রাখি?

Friday, October 26, 2012

নারীর কথা: কেনো আমি একটি কর্মজীবন পাবো না?


আমি অনেকবার ভেবেছি জবটি করবো কি করবো না অগণিত চাকরির প্রস্তাব আমি ফিরিয়ে দিয়েছি বিভিন্ন সামাজিক পারিবারিক যোগাযোগ  সমস্যার কারণে বর্তমান প্রস্তাবটি সব দিক দিয়ে উপযুক্ত মনে হচ্ছে এটি আমার যোগ্যতা ব্যক্তিগত জীবন-দর্শনের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ সকল বিবেচনায় একটি উপযুক্ত চাকরি হওয়া সত্ত্বেও চাকরিটি আমি করবো কিনা, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না

চাকরি করার পথে অনেকগুলো বাধার মধ্যে বড় দুটি বাধা হলো আমার মা হওয়া এবং আমার স্ত্রী হওয়া আমি মা হতে চলেছি আগামি আট-মাসের মধ্যে প্রথমটি নিয়ে চিন্তিত নই, কারণ যে প্রতিষ্ঠানে যোগ দিবো, সেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া যাবে তারপর একটি কাজের মানুষ যোগাড় করে নেবো দ্বিতীয় বিষয়, আমার স্ত্রী হওয়ার বিষয়টিতে যে কেউ আঁতকে ওঠতে পারেন তবে কি স্ত্রী হওয়া নারীর জন্য অস্বাভাবিক কিছু? না, তা মোটেই নয় আমি মূলত আমার স্বামীর বিষয়টি মনে নিয়েই কথা বলেছি

আমার স্বামীর কথা বলি আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি তার যে বিষয়টিতে আমি বেশি দুর্বল ছিলাম, তা হলো নারীর প্রতি তার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ভক্তি আমার স্বামী খুব মাতৃভক্ত মানুষ, এখনও বাড়িতে গেলে মায়ের হাতে ভাত খায় নারী ঘর থেকে বের হয়ে কাজ করুক এবং দেশের কর্মশক্তিতে যোগ দিক এরকম মনোভাব সে সবসময়ই প্রকাশ করতো রাস্তা-ঘাটে নারীর চলাচলে সামাজিক বাধা, পাবলিক বাহনে তাদের যাতায়াতের সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে আমার স্বামী সবসময়ই সোচ্চার

এখনও তার মনোভাবের কোন পরিবর্তন দেখি না কিন্তু আমার চাকরি করার বিষয়টি ওঠে আসাতে তাকে একদম নিশ্চুপ এবং নিরাবেগ দেখছি এখন পর্যন্ত হ্যাঁ বা না কিছু পরিষ্কার করে বলছে নাচাকরিটি কি করবো এরকম প্রশ্নের জবাবে তারহ্যাঁ, করো না!” জবাবে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তার মনের কথাটি আসলে কী? এমনও নয় যে আমি তার বিশ্বাস ভঙ্গ করবো, কারণ নিজের সততায় আমার আত্মবিশ্বাস আছে আমার স্বামীরও ওরকম আশঙ্কা আছে বলে মনে করি না

সবমিলিয়ে এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি আমি এখন শুধুই চাকরি করবো বলে পড়াশুনা করি নি, কিন্তু শুধুই গৃহিনী হয়ে কিচেন মাস্টার হয়ে জীবন শেষ করবো - এরকম চিন্তাও করি নি অন্যদিকে আমার স্বামীকেও আমি ভালোবাসি এবং আমি চাই সে ভালো থাকুক এবং তার কর্মজীবন গড়ে ওঠুক এপর্যন্ত তার ক্যারিয়ারে বাধা সৃষ্টি করে এরকম কিছুই করি নি,বরং তাকে দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত করতে যা-কিছু করণীয় সবই করে যাচ্ছি, যার বিবরণ এখানে শেষ করা যাবে না আমি একজন সফল গৃহিনী থাকতে চাই, তাই বলে কি আমি একটি কর্মজীবন পাবো না?

Monday, October 22, 2012

প্রকৃতি প্রকৃতিস্থ করে এখনও



 










 
 
শ্রম আর অবসাদে যখন

বুড়িয়ে তোলে প্রকৃতির

অতি বুদ্ধিমান প্রাণীটিকে;

 

ভ্রান্তি যখন ক্লান্তিকে বাড়িয়ে

জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে

তৈরি করে বিভ্রান্তি;

 

চির সৃষ্টিশীল মস্তিষ্কটি যখন

কোন কিছুই শেষ করতে

না পারার মর্মবেদনায় নিষ্ক্রীয়প্রায়;

 

তখন অবচেতনে এক অতি সাধারণ বিকেলের

প্রস্তুতিবিহীন বৃষ্টির চিরন্তন ঝমঝম শব্দে,

পাতা আর ভূমিতে ধারাপাতের ছন্দে হঠাৎ

নাম-না-জানা বেদনায়

এক চেতনার সৃষ্টি হয়।

 

অথবা বিদ্যুৎবিহীন ভরা পূর্ণিমায়

রাতে ছাদে একাকী পড়ে

চরম উপলব্ধিতে, পুলকে আর সঞ্জীবনে

আবার প্রকৃতিস্থ হয়ে ওঠে।

প্রকৃতির কোন কিছুই অসার নয়।

 

প্রকৃতির মাতৃচুম্বনে

আবারও মনে হয়

এজীবন অসার বা

ব্যর্থতাকে ব্যর্থতায় শেষ করে

দেবার জন্য নয়।

Thursday, October 18, 2012

“জ্ঞানী কে?” সক্রেটিসের উত্তরটি দেখুন!


সক্রেটিসকে হেমলক খাইয়ে মৃত্যুদণ্ড দেবার গোড়ার কারণটি ছিল, তিনি নিজেকে জ্ঞানী মনে করতেন এবং অন্যের জ্ঞান কেমন তা যাচাই করার জন্য সমাজের জ্ঞানী ও বিদ্বান ব্যক্তিদেরকে পরীক্ষা করতেন, অর্থাৎ যেখানে সেখানে তাদেরকে হেস্তনেস্ত করতেন। ওই বুদ্ধিজীবী অভিজাত সমাজটিই ক্ষেপে গিয়ে এথেন্সের আদালতে অভিযোগ পেশ করেছিলেন যে, সক্রেটিস যুব সম্প্রদায়কে বিপথে পরিচালিত করছেন।
সে যা-ই হোক, আসল কথায় আসি। সক্রেটিস যে জ্ঞানী এই দাবীর পক্ষে আদালতে তিনি এক হাস্যকর সাক্ষী দাঁড় করালেন: সেই সাক্ষী হলেন ডেলফির দেবতা। সক্রেটিস বললেন, বন্ধু চেরেফোন নাকি ডেলফির দেবতা এপোলোকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সক্রেটিসের চেয়ে অধিক জ্ঞানী আরও কেউ আছে কিনা। এপোলো তার সমুদ্রপ্রবাহী কণ্ঠে উত্তর দিয়েছিলেন, “না, আর কেউ নেই।” দেবতার এমন মূল্যায়ন শুনে তো সক্রেটিস রীতিমতো টাসকি খাইলেন, তা কী হয়? তিনি তো নিশ্চিত যে তার জ্ঞান নেই। তাহলে ডেলফির দেবতার এমন মতামতের মানে কী?
অতএব, তিনি বিষয়টি অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। একজন জ্ঞানীকে খুঁজে বের করে তিনি ডেলফিতে নিয়ে গিয়ে প্রমাণিত করবেন যে, তার চেয়েও জ্ঞানী ব্যক্তি পৃথিবীতে আছে। সক্রেটিস তার দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখলেন যে, সমাজে যারা জ্ঞানী বলে পরিচিত তারা সত্যিকার অর্থে জ্ঞানী নন, যদিও সমাজ তাদেরকে সে আসনে বসিয়ে রেখেছে। তিনি দেখলেন যে, কবিরা জ্ঞান দিয়ে লেখেন না, তারা লেখেন প্রেরণা দিয়ে। অনেকেই নিজেকে জ্ঞানী মনে করেন, কিন্তু প্রকৃত বিচারে চূড়ান্ত জ্ঞানের বিষয় কারও কাছেই নেই। শিল্পী কারিগর ও বিশেষজ্ঞদের কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তিনি সত্যিই তাদের চেয়ে অনেক কম জানেন। নিজ নিজ বিষয়ে তারা কত কিছুই না জানেন! কিন্তু তাদেরও রয়েছে চরম সীমাবদ্ধতা - নিজ বিষয় ছাড়া অন্য সকল বিষয়েই তারা মূর্খ।
যত বেশি খ্যাতিমান, তিনি দেখলেন যে, ততই বেশি কম জানেন। সক্রেটিস হতাশ হয়ে তাদেরকে বলে আসতেন, “আপনি বা আমি, আমরা কেউই জ্ঞানী নই। তবে আপনার চেয়ে আমার জ্ঞান একটুখানি বেশি এই অর্থে যে, আমি অন্তত এতটুকু জানি যে আমি কিছুই জানি না। এই ‘জানি না’ জ্ঞানটুকুও আপনার নেই।”
সক্রেটিসের এই চরম ঝুঁকিপূর্ণ জরিপে অগণিত ‘জ্ঞানীলোক’ তার শত্রু হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর তিনি পেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কেন ডেলফির ওই দেবতা তাকে জ্ঞানী বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। পরিপূর্ণ জ্ঞান কারও কাছেই নেই। হাজার বছর পরেও অজুত অজুত বিষয় এখনও মানুষের অজানা রয়েছে। কিছু কিছু বিষয় হয়তো অজানাই থেকে যাবে। সক্রেটিস জ্ঞানী ছিলেন এই যুক্তিতে যে, তিনি তার মানবিক অজ্ঞতা সম্পর্কে অবগত এবং স্পষ্টবাদী ছিলেন। অতএব সে-ই জ্ঞানী যিনি তার অজ্ঞতার ‘রকম ও পরিমাণ’ জানেন এবং নিজের অজ্ঞতায় যার কোন দ্বিধা নেই। এই মতামত মহাজ্ঞানী সক্রেটিসের।

অবলম্বন: ১) সক্রেটিসের জবানবন্দি নিয়ে প্লেটো’র এপোলজি; এবং ২) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত “বরণীয় মানুষ স্মরণীয় বিচার”

Wednesday, October 17, 2012

*জীবন পরিক্রমা - রবার্ট ব্রাউনিং

































ছায়াপথিকের অনুবাদ

) বৃদ্ধ হও সাথে আমার!
সর্বোত্তম বাকিই রয়েছে জানার,
জীবনের শেষাংশের জন্য সৃষ্ট এই প্রথমাংশ:
তাঁর হাতে আমাদের সময়
যিনি বলেছেন, “সমগ্র পরিকল্পনাটি আমার,
যৌবন কেবল তার অর্ধেক; আস্থা করো ঈশ্বরে;
দেখো সমগ্রটি, ভয় না পেয়ে!”

) পুষ্প সঞ্চয় অবাঞ্ছনীয় নয়,
যৌবন কামনায় বললে, “কোন্ গোলাপটি হবে আমার,
কোন পদ্মটি যাবো পেরিয়ে, কিন্তু আক্ষেপ করবো হারিয়ে?”
তারকারাজির অনুসরণ নয় তো অমঙ্গল,
জীবন বললে, “বৃহস্পতি নয়, নয় মঙ্গল;
আমারটি হবে সেই কল্পিত তারকা
যাতে সব আছে, সব যায় ছাড়িয়ে!”

) এমন নয় যে আশা আর দুরাশায়
যৌবনের ছোট্ট সময়টি অতিক্রম করাকে,
আমি ভুল মনে করি: বোকামি আর অকিঞ্চিতকর বলি!
বরং অবিশ্বাসকে মূল্য দিই আমি
ইতর প্রাণীর যা না হলেও চলে,
তারা পরিপূর্ণ এক মাংসপিণ্ডতেই নিঃশেষ,
আত্মিক চেতনায় ভাবলেশহীন

) জীবনের অহংকার নিস্ফল হয় যেখানে
মানুষের জীবন শুধুই জৈবিক সুখে মেতে থাকে
তা খুঁজে পেয়ে তৃপ্ত থাকে:
এমন সুখভোগ শেষ হলে, পরে
নিশ্চিতভাবে তা মানুষকে শেষ করে;
ফসলপুষ্ট পাখির আর কিসের দুশ্চিন্তা?
পূর্ণউদর জানোয়ার কি অনিশ্চয়তায় অস্থির হয়?

) উল্লাস করো এজন্য যে আমরা সম্পর্কযুক্ত
তাঁর সঙ্গে যিনি যোগান দেন, কেড়ে নেন না,
সৃষ্টি করেন, ফিরিয়ে নেন না!
এমন এক চেতনা যা মাটির দেহে সয় না;
আমরা মাটি থেকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী
যিনি দেন, তাঁর বংশ তা গ্রহণ করে,
আমি বিশ্বাস করি

) তবে স্বাগত জানাও প্রতিটি দুর্ভাগ্যকে
যা ধরিত্রীর মসৃণতাকে করে বন্ধুর,
গ্রহণ করো প্রতিটি হুল যা দেখায় শুধু ভয়
বসে না, দাঁড়ায়ও না কিন্তু চলে যায়!
হোক আমাদের একগুণ আনন্দের
তিনগুণ দুঃখ!
কষ্টকে উপেক্ষা করে চেষ্টা করো;
বেদনায় শিক্ষা নাও, হিসাবে নিয়ো না;
সংগ্রামে সাহস করো, অভিযোগ কখনও না!

) আর তাতে প্রতিষ্ঠিত হয়
একটি পরস্পর-বিরোধী সত্য:
তাচ্ছিল্য থেকে সান্ত্বনা -
ব্যর্থতা থেকে জীবনের সফলতা;
সান্ত্বনা পাই চাওয়া আর না পাওয়ার ব্যবধানে:
(না পাওয়ার ব্যবধান যদি না- থাকে)
আমি তো ইতর প্রাণীতে নেমে গেলাম,
কিন্তু সৃষ্টির নিম্নস্তরে নামবো না আমি

) সে প্রাণী ছাড়া আর কী
যার প্রাণ দেহের চাওয়ায় যায় মিশে,
যার আত্মা হাত-পায়ের ইচ্ছেমতো খেলে?
শুধু মানুষের জন্য পরীক্ষা -
দেহ তার সর্বোচ্চ চেষ্টায়
আত্মাকে কতটুকু এগিয়ে দিতে পারে নিঃসঙ্গ পরিক্রমায়?

















) তাই প্রাপ্ত দানগুলো হোক ব্যবহৃত:
অতীত ছিল পূর্ণতায় সমৃদ্ধ
শক্তি ছিল সর্বদিকে, উৎকর্ষতা প্রতি বাঁকে:
চক্ষু-কর্ণ করেছিল তাদের কাজ,
মস্তিষ্ক করেছিল সব সঞ্চয়:
হৃদয়ের কি উচিত নয় কৃতজ্ঞতায়
স্পন্দিত হয়ে একবার বলা
কত উত্তম জীবন আর শিখন খেলা?

১০) একবার কি বলা উচিত নয়
প্রশংসা ঈশ্বর, তোমার হোক জয়!
আমি দেখেছি তোমার সম্পূর্ণ নকসা,
যে আমি দেখেছিলো তোমার পরাক্রম,
সে আমি দেখলো আজ তোমার প্রেম:
উত্তম তোমার পরিকল্পনা:
ধন্য আমি মানুষ হয়ে!
কারিগর, গড়ো আমাকে, সম্পন্ন করো,
-- বিশ্বাস করি তোমার কাজে!”

১১) দেহ বড়ই আরামের;
দেহের গোলাপ-জালে বন্দি আত্মা
মিশে গিয়েও করে যায় শান্তির অন্বেষণ:
আত্মাকে তাই যদি পুরস্কৃত করা যেত
পাশবিক প্রাপ্তির সাথে সাম্য রক্ষার জন্য,
তাতে উচ্চতর ফল আসতো, কারণ
তাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা হতো

১২) এমন যেন কখনও না বলি যে,
দেহের চাওয়ার বিপক্ষে যুদ্ধ করে
আমি অগ্রসর হয়েছি, সমগ্রকে করেছি করায়ত্ত!”
পাখি যেমন পাখা ঝাপটিয়ে ওড়ে আর গায় গান,
চলো আর্তচিৎকারে বলি, “সকল ভাল আমাদের,
আত্মা দেহের চেয়ে, অথবা দেহ আত্মার চেয়ে
বেশি করে নি দান

১৩) এজন্য আমি বৃদ্ধকে করি আহ্বান
যৌবনের উত্তরাধিকার করো তারে দান,
জীবনের প্রচেষ্টা অতঃপর পূরণ করবে তার মেয়াদ:
সেখান থেকে সৃষ্টি করবো, অনুমোদন করবো
পরিপূর্ণ মানুষকে, যে হবে চিরদিনের জন্য
পরিপূর্ণ পশু হতে ভিন্ন: একজন অপরিপূর্ণ ঈশ্বর

১৪) অতঃপর আমি নেব বিশ্রাম
আমার বিদায়ের পূর্বে,
আবার শুরু হবে দুঃসাহসিক আর নতুন অভিযান:
সেখানে নির্ভয় এবং শান্তভাবে
যখন আমি পরবর্তি যুদ্ধ শুরু করবো,
তখন পারবো বুঝতে কোন্ বর্মটি পড়বো

১৫) যৌবন শেষে, আমি হিসাব করবো
আমার লাভ আর লোকসান:
দগ্ধ ছাইটুকু ফেলে দিয়ে, যা থাকে তা- হবে সোনা:
দেখবো আমি ওজন করে,
হয়তো প্রশংসা নয়তো ভৎসা:
যৌবনের সবই বিতর্কিত: বৃদ্ধ হলে আমি বুঝবো

১৬) দেখো, যখন নেমে আসে সাঁঝ;
কোন এক মুহূর্তে বন্ধ হয় সব কাজ,
ধূসর অন্ধকারে গোধূলি জেগে ওঠে:
পশ্চিমাকাশ থেকে তখন মৃদুস্বরে কেউ বলে -
এটি পেছনের দিনগুলোর সাথে করো যুক্ত,
এটি নাও আর যাচাই করো মূল্য বিশেষ:
এভাবে আরেকটি দিনের হলো শেষ














১৭) তাই, বৃদ্ধ বয়সে এসে,
যদিও সকল বিতর্ক যায় ভেসে,
আমি পার্থক্য আর তুলনা করে বলতে চাই শেষে,
প্রথম জীবনের সে আবেগই ছিল সার্থক,
সবকিছু মেনে নেওয়া ছিল নিরর্থক:
ভবিষ্যতকে এখন করতে পারি গ্রহণ
যেহেতু অতীতকে করেছি পরীক্ষণ।

১৮) মানুষ বিশেষ কিছু পায় নি
শুধুই আত্মায় প্রাপ্ত প্রাণশক্তি ব্যতীত
যা দিয়ে সে আজ শিখে, আগামিকাল করবে কাজ:
এমনভাবে কাজ করো
যেন কারিগরের কাজকে অনুসরণ করতে পারো
তাতে আছে সঠিক কৌশলের ইঙ্গিত,
আছে যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার কৌশল।

১৯) মঙ্গলের জন্যই, যৌবনকে
করতে হবে চেষ্টা, অনিশ্চিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে,
যাতে সে বানাতে পারে,
নির্ভর না করে অন্যের বানানো জিনিসে:
তাতে বার্ধক্য, বিবাদমুক্ত থেকে,
চেষ্টার পূর্বেই বুঝতে পারে।
যৌবন অপেক্ষা করেছিলো বার্ধক্যের:
বার্ধক্য নির্ভয়ে অপেক্ষা করবে মৃত্যুর।

২০)  এটিই যথেষ্ট, যদি তুমি সত্য
এবং মঙ্গল এবং অসীমকে
বুঝতে পারো, যেমন তোমার হাতকে
তোমার নিজের বলে বুঝতে পারো,
চূড়ান্ত প্রজ্ঞা নিয়ে,
আর সুনিশ্চিত তত্ত্ব দিয়ে;
অথচ যৌবন ছিল অর্বাচিনতায় পূর্ণ,
তাই (সত্য, মঙ্গল আর অসীমকে নিয়ে)
বার্ধক্যে নিজেকে মনে করো না
তুমি একা।

২১) থাকো তুমি সেখানেই, একবার এবং সবসময়,
আলাদা করে তুচ্ছ মন থেকে বৃহৎ মনকে,
স্বীকৃতি দিয়ে সকল স্থানের সকল ব্যক্তিকে!
সে কি আমি নয়, যার ত্রুটি বের করতো সকলে?
সে কি তারা নয়, যাদেরকে
আমার আত্মা থেকে করতাম ঘৃণা?
তা কি ঠিক ছিল?
(অন্তত) বার্ধক্যে যেন সত্য বলি
আর তাতে শান্তি আসুক অবশেষে!

২২) কিন্তু, কে এর বিচার করবে?
দশজনে যা ভালোবাসে, আমি করি তা ঘৃণা,
যা তারা এড়িয়ে যায়, তার অনুসরণ করি আমি,
যা বাতিল করে তা করি গ্রহণ?
দশজন, যারা চক্ষু-কর্ণে আমারই মতন:
আমরা সকলেই অনুমান করি,
তারা ওটা হলে আমি এটা:
কাকে গ্রহণ করবে আমার আত্মা?

২৩) এমন নয় যে, আমজনতার বিষয়
যাকে বলে ‘কাজ, তাকেই করতে হবে অনুমোদন,
কৃত কাজ, দৃষ্টিগোচর হলেই হয়ে গেলো কাজ;
যার ওপরে, সাধারণের মানদণ্ডে,
আমজনতার হাত নেমে স্পর্শ নেয়,
তা নিমিষে তাদের মনে স্থান পেয়ে যায়,
মুহূর্তে তারা এর মূল্য নির্ধারণ করে ফেলে:

২৪) কিন্তু সেগুলো, যা মানুষের অঙ্গুলি-বৃদ্ধাঙ্গুলি
আঁকড়ে ধরতে ব্যর্থ হয়,
যা তারা এড়িয়ে যায়, হিসাবে নিতে পারে না;
সমস্ত অপরিণত বোধশক্তি,
অনিশ্চিত উদ্দেশ্যগুলো,
যাকে কাজ বলা চলে না,
তবু তা মানুষের ওজনকে বৃদ্ধি করে।
















২৫) চিন্তাগুলোকে কদাচিৎ প্রকাশ
করা যায় (দুনিয়ার) সংকীর্ণ কাজে,
কল্পনাগুলো ভাষা হয়ে যায় পালিয়ে;
যা-কিছু হতে পারি নি আমি,
যা-কিছু মানুষ উপেক্ষা করেছে আমাতে,
তার সবকিছু নিয়েই আমাকে গ্রহণ
করেছেন ঈশ্বর নিরাকার,
যার (কুমোরের) চাকে পানপাত্র পেয়েছে আকার

২৬) হ্যাঁ কুমোরের চাকের রূপকটি
দেখো একবার ভেবে!
ভাবো কালের চক্র ঘুরে কীভাবে,
কেনই বা কাদারূপ আমি থাকি স্থির হয়ে, -
তুমি, যাকে মূর্খেরা করে প্ররোচনা,
যখন নেশায় তাদের করে প্রচঞ্চনা,
জীবন যদি পালিয়ে যাবে, সবকিছু যাবে বদলে;
সবকিছু হয়ে যায় অতীত, তবে ধরো আজকে!”

২৭) নির্বোধ! যা কিছু স্থায়ি,
থাকে চিরদিন, বদল হয় না তা:
দুনিয়া বদলায়, আত্মা আর
ঈশ্বর থাকে নিশ্চল:
যা তোমাতে করেছে প্রবেশ,
তা ছিল, আছে আর থাকবে অনিমেষ;
কালের চক্র ঘুরে নয়তো থামে:
কুমোর আর মাটি থাকে চিরকাল

২৮) চলন্ত ধারায় তিনি দিয়েছেন
তোমায় অস্তিÍত্ত্ব
ছিল যা আকৃতিবিহীন বস্তু,
চলন্ত বর্তমানকে অবশ্যই খুশি হয়ে ধরবে তুমি:
যন্ত্রের শুধু একটিই কাজ
আত্মাকে দেয়া সেই সাজ,
পরখ করা আর ঘুরিয়ে দেখা,
সন্তুষ্ট রূপে তোমাকে রাখা

২৯) তাতে কী হবে, যদি পানপাত্রের
শুরুতে থাকে কিছু সহাস্য প্রেমদেবের নকসা
পাত্রের নিচে (কুমোরের হাত)
যদি না থামে, চাপও না দেয়?
তাতে কী হবে, যদি পানপাত্রের
গলার দিকে থাকে মাথারখুলির নকসা
গড়ে ওঠে (পানপাত্রের গলা)
নিয়ে আরও ভয়ংকর আকৃতি
মেনে নিতে হয় (কুমোরের হাতের) চাপ?

 ৩০) নিচের দিকে তাকিয়ো না
ওপরে তাকাও তুমি!
ভোজনালয়, উজ্জ্বল বাতিদান আর তূর্যের ধ্বনি,
পাত্রে ফুলে ওঠেছে নতুন পানীয়
মালিকের চকচকে ওষ্ঠদ্বয়!
স্বর্গের কাঙ্ক্ষিত পানপাত্র, তুমি,
মাটির চাক দিয়ে আর
কী দরকার তোমার?

৩১) কিন্তু আমার দরকার, আগের মতোই এখনও,
হে ঈশ্বর তোমাকে,
যে তুমি মানুষকে গড়ে তোলো;
আর দেখো, যখন আবর্তিত হওয়া ছিলো কষ্টের চূড়ান্ত,
আমি, সে চক্রের সাথে,
সকল আকারে আর রঙের প্রাচুর্যতায়,
যখন দিকভ্রান্ত ঘুরছি, - তখনও ভুলিনি গন্তব্য,
তোমার তৃষ্ণার জল হতে:

৩২) তোমার এই সৃষ্টিকে তাই গ্রহণ করো
করো এর ব্যবহার:
শুদ্ধ করো যত লুকিয়ে থাকা ত্রুটি;
কী দাগ আছে বস্তুটিতে;
কী বিকৃতি এর ব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করে!
আমার সময়টুকু রইলো তোমার হাতে!
পরিশুদ্ধ করো পানপাত্রকে তোমার নকশায়!
বার্ধক্য মূল্য দিক যৌবনকে,
আর মৃত্যু পূর্ণতা দিক বার্ধক্যকে!


=======================================
*মূল কবিতা:রাবাই বিন এজরা ১৮৬৪ সালেড্রামাটিস পারসনাই গ্রন্থের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয় ৩২ পদে লেখা ১৯২ লাইনের কবিতাটি পদ করে ভাগ করা হয়েছেকবিতার বাংলা নামটি অনুবাদকের দেয়া। ভাষাগত পার্থক্যের কারণে বাংলা অনুবাদে বেশি লাইন হয়েছে। রবার্ট ব্রাউনিং-এর স্বভাবগত অস্পষ্টতা দূর করার জন্য প্রথম বন্ধনীতে কিছু সংযুক্তিমূলক শব্দাবলী জুড়ে দেয়া হয়েছে, যাকে কবিতার অংশ মনে করা যাবে না।

*পটভূমি: কালোত্তির্ণ কবিতাটি জীবনের গভীর তত্ত্বে টইটুম্বুররাবাই বিন এজরা প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে সমসাময়িক সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল রাবাই ইবনে এজরা, রবার্ট ব্রাউনিং-এর জীবনদর্শনের মুখপাত্র, একটি ঐতিহাসিক চরিত্র (১০৯২-১১৬৭) রাবাই মধ্যপ্রাচ্যের ভাষায় রাব্বি রাবাই ইবনে এজরা ছিলেন একাধারে একজন পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক, কবি এবং শিক্ষকরাবাই বিন এজরা কবিতায় রবার্ট ব্রাউনিং বৃদ্ধ বয়স, জীবনের ব্যর্থতা এবং মহত্ব লাভের প্রচেষ্টাকে গৌরবান্বিত করেছেন












*কবি পরিচিতি: পিতার পাঠাগারের সমস্ত সুবিধাকে গ্রাস করে ১৮ বছরেই কবিত্ব বরণ করেন রবার্ট ব্রাউনিং (১৮১২-১৮৮৯) প্রধানত তিনি একজন মানুষের কবি (Poet of Man); মানুষকে ভালোবাসতেন এবং মানুষই ছিল তাঁর অধ্যয়নের বিষয় তিনি ছিলেন আত্মা ব্যক্তিত্বের কবি মানুষের চিন্তা, অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য মানব আত্মার অভ্যন্তরে ছিল তার দৃষ্টি, তাই দক্ষতা দেখিয়েছেন জীবনের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে (psycho-analysis) তাঁর কবি প্রতিভা গেঁথে আছে ড্রামাটিক মনোলগে (নাটকীয় এককালাপ)  কথোপকথনের রীতিতে রচিত তাঁর কবিতাগুলো অমিত্রাক্ষর ছন্দে (blank verse) লেখাব্রাউনিং-এর বৈচিত্রময় লেখার স্টাইলে টিএস ইলিয়ট (দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড-এর কবি) প্রভাবিত হয়েছিলেন

*অনুবাদ নাকি হনুবাদ: পাঠক হিসেবে যা উপলব্ধি করেছি, প্রকাশ করতে পেরেছি তার খুব কমই একটি ভাষাকে কখনও উপযুক্ত ভাবাবেগ দিয়ে অন্য ভাষায় অনুবাদ করা যায় না কবিতা যে অনুবাদ করা যায় না, তা বলাই বাহুল্য রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলী এজন্য কবি নিজেই অনুবাদ করেছিলেন জসিম উদ্দীনের নকসী কাঁথার মাঠ-এর ইংরেজি অনুবাদ দেখলে বুঝা যায় অনুবাদ কতটুকু সফল ভাষান্তর হলেও ভাবান্তর হয় না এক্ষেত্রেও তা- হয়েছে কবিতা তো ভাবের বিষয় আমার প্রিয় কবিদের একজন হলেন রবার্ট ব্রাউনিং, তাই তার কবিতার একটি জলছাপ রাখার চেষ্টা করলাম মাত্র

*কৈফিয়ত: উনবিংশ শতকের ব্রিটিশ ইংরেজির সাথে আজকের ইংরেজি শব্দশৈলির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য অনেক শব্দের অর্থ প্রয়োগ গেছে বদলে বলে রাখা প্রয়োজন যে, অভিধান সবসময় চূড়ান্ত অর্থ দিতে পারে নি, কেবল অর্থ নির্ণয় করায় সাহায্য দিতে পেরেছে, যদিও অনেক সময় বিভ্রান্তও করেছে অনুবাদককে সতর্ক পাঠকের প্রথম দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, অনুবাদক শব্দের ব্যবহারে খুব বেশি স্বাধীনতা নিয়েছে এভাবে ভুল না বুঝার জন্য নিচের কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটি স্পষ্ট করার চেষ্টা করলাম:

effect এর বর্তমান অর্থ কার্যকর করা (), কিন্তু কবিতায় এর অর্থ হলো সৃষ্টি করা
uncouth এর বর্তমান অর্থ অমার্জিত বা অশিষ্ট (১৯), কিন্তু কবিতায় এর অর্থ হলো অনিশ্চিত

এরকম অগণিত উদাহরণ আছে, যা উল্লেখ করে পাঠকের অস্বস্তি সৃষ্টি করতে চাই না কিছু শব্দ আমাদের প্রচলিত অভিধানে নেইও অবশ্য ইন্টারনেট-এর বদৌলতে অধিকাংশ শব্দেরইইংরেজি সংজ্ঞা এবং ব্যবহার’ বের করা গেছে
=======================================