ছায়াপথিকের অনুবাদ
১) বৃদ্ধ হও
সাথে আমার!
সর্বোত্তম বাকিই রয়েছে
জানার,
জীবনের শেষাংশের জন্য
সৃষ্ট এই
প্রথমাংশ:
তাঁর হাতে আমাদের
সময়
যিনি বলেছেন, “সমগ্র
পরিকল্পনাটি আমার,
যৌবন কেবল তার
অর্ধেক; আস্থা
করো ঈশ্বরে;
দেখো সমগ্রটি, ভয়
না পেয়ে!”
২) পুষ্প সঞ্চয়
অবাঞ্ছনীয় নয়,
যৌবন কামনায় বললে,
“কোন্ গোলাপটি
হবে আমার,
কোন পদ্মটি যাবো
পেরিয়ে, কিন্তু
আক্ষেপ করবো
হারিয়ে?”
তারকারাজির অনুসরণ নয়
তো অমঙ্গল,
জীবন বললে, “বৃহস্পতি
নয়, নয়
মঙ্গল;
আমারটি হবে সেই
কল্পিত তারকা
যাতে সব আছে,
সব যায়
ছাড়িয়ে!”
৩) এমন নয়
যে আশা
আর দুরাশায়
যৌবনের ছোট্ট সময়টি
অতিক্রম করাকে,
আমি ভুল মনে
করি: বোকামি
আর অকিঞ্চিতকর
বলি!
বরং অবিশ্বাসকে মূল্য
দিই আমি
ইতর প্রাণীর যা
না হলেও
চলে,
তারা পরিপূর্ণ এক
মাংসপিণ্ডতেই নিঃশেষ,
আত্মিক চেতনায় ভাবলেশহীন।
৪) জীবনের অহংকার
নিস্ফল হয়
যেখানে
মানুষের জীবন শুধুই
জৈবিক সুখে
মেতে থাকে
তা খুঁজে পেয়ে
তৃপ্ত থাকে:
এমন সুখভোগ শেষ
হলে, পরে
নিশ্চিতভাবে তা মানুষকে
শেষ করে;
ফসলপুষ্ট পাখির আর
কিসের দুশ্চিন্তা?
পূর্ণউদর জানোয়ার কি
অনিশ্চয়তায় অস্থির হয়?
৫) উল্লাস করো
এজন্য যে
আমরা সম্পর্কযুক্ত
তাঁর সঙ্গে যিনি
যোগান দেন,
কেড়ে নেন
না,
সৃষ্টি করেন, ফিরিয়ে
নেন না!
এমন এক চেতনা
যা এ
মাটির দেহে
সয় না;
আমরা মাটি থেকে
ঈশ্বরের নিকটবর্তী
যিনি দেন, তাঁর
বংশ তা
গ্রহণ করে,
আমি বিশ্বাস করি।
৬) তবে স্বাগত
জানাও প্রতিটি
দুর্ভাগ্যকে
যা ধরিত্রীর মসৃণতাকে
করে বন্ধুর,
গ্রহণ করো প্রতিটি
হুল যা
দেখায় শুধু
ভয়
বসে না, দাঁড়ায়ও
না কিন্তু
চলে যায়!
হোক আমাদের একগুণ
আনন্দের
তিনগুণ দুঃখ!
কষ্টকে উপেক্ষা করে
চেষ্টা করো;
বেদনায় শিক্ষা নাও,
হিসাবে নিয়ো
না;
সংগ্রামে সাহস করো,
অভিযোগ কখনও
না!
৭) আর তাতে
প্রতিষ্ঠিত হয়
একটি পরস্পর-বিরোধী
সত্য:
তাচ্ছিল্য থেকে সান্ত্বনা
-
ব্যর্থতা থেকে জীবনের
সফলতা;
সান্ত্বনা পাই চাওয়া
আর না
পাওয়ার ব্যবধানে:
(না পাওয়ার ব্যবধান
যদি না-ই থাকে)
আমি তো ইতর
প্রাণীতে নেমে
গেলাম,
কিন্তু সৃষ্টির নিম্নস্তরে নামবো না আমি।
৮) সে প্রাণী
ছাড়া আর
কী
যার প্রাণ দেহের
চাওয়ায় যায়
মিশে,
যার আত্মা হাত-পায়ের ইচ্ছেমতো
খেলে?
শুধু মানুষের জন্য
এ পরীক্ষা
-
দেহ তার সর্বোচ্চ
চেষ্টায়
আত্মাকে কতটুকু এগিয়ে
দিতে পারে
নিঃসঙ্গ পরিক্রমায়?
৯) তাই প্রাপ্ত
দানগুলো হোক
ব্যবহৃত:
অতীত ছিল পূর্ণতায়
সমৃদ্ধ
শক্তি ছিল সর্বদিকে,
উৎকর্ষতা প্রতি
বাঁকে:
চক্ষু-কর্ণ করেছিল
তাদের কাজ,
মস্তিষ্ক করেছিল সব
সঞ্চয়:
হৃদয়ের কি উচিত
নয় কৃতজ্ঞতায়
স্পন্দিত হয়ে একবার
বলা
“কত উত্তম এ জীবন
আর শিখন
খেলা”?
১০) একবার কি
বলা উচিত
নয়
“প্রশংসা ঈশ্বর, তোমার হোক
জয়!
আমি দেখেছি তোমার
সম্পূর্ণ নকসা,
যে আমি দেখেছিলো
তোমার পরাক্রম,
সে আমি দেখলো
আজ তোমার
প্রেম:
উত্তম তোমার পরিকল্পনা:
ধন্য আমি মানুষ
হয়ে!
কারিগর, গড়ো আমাকে,
সম্পন্ন করো,
-- বিশ্বাস করি তোমার
কাজে!”
১১) দেহ বড়ই
আরামের;
দেহের গোলাপ-জালে
বন্দি আত্মা
মিশে গিয়েও করে
যায় শান্তির
অন্বেষণ:
আত্মাকে তাই যদি
পুরস্কৃত করা
যেত
পাশবিক প্রাপ্তির সাথে
সাম্য রক্ষার
জন্য,
তাতে উচ্চতর ফল
আসতো, কারণ
তাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা
হতো।
১২) এমন যেন
কখনও না
বলি যে,
“দেহের চাওয়ার বিপক্ষে যুদ্ধ
করে
আমি অগ্রসর হয়েছি,
সমগ্রকে করেছি
করায়ত্ত!”
পাখি যেমন পাখা
ঝাপটিয়ে ওড়ে
আর গায়
গান,
চলো আর্তচিৎকারে বলি,
“সকল ভাল
আমাদের,
আত্মা দেহের চেয়ে,
অথবা দেহ
আত্মার চেয়ে
বেশি করে নি
দান।”
১৩) এজন্য আমি
বৃদ্ধকে করি
আহ্বান
যৌবনের উত্তরাধিকার করো
তারে দান,
জীবনের প্রচেষ্টা অতঃপর
পূরণ করবে
তার মেয়াদ:
সেখান থেকে সৃষ্টি
করবো, অনুমোদন
করবো
পরিপূর্ণ মানুষকে, যে
হবে চিরদিনের
জন্য
পরিপূর্ণ পশু হতে
ভিন্ন: একজন
অপরিপূর্ণ ঈশ্বর।
১৪) অতঃপর আমি
নেব বিশ্রাম
আমার বিদায়ের পূর্বে,
আবার শুরু হবে
দুঃসাহসিক আর নতুন অভিযান:
সেখানে নির্ভয় এবং
শান্তভাবে
যখন আমি পরবর্তি
যুদ্ধ শুরু
করবো,
তখন পারবো বুঝতে
কোন্ বর্মটি
পড়বো।
১৫) যৌবন শেষে,
আমি হিসাব
করবো
আমার লাভ আর
লোকসান:
দগ্ধ ছাইটুকু ফেলে
দিয়ে, যা
থাকে তা-ই হবে
সোনা:
দেখবো আমি ওজন
করে,
হয়তো প্রশংসা নয়তো
ভৎসা:
যৌবনের সবই বিতর্কিত:
বৃদ্ধ হলে
আমি বুঝবো।
১৬) দেখো, যখন
নেমে আসে
সাঁঝ;
কোন এক মুহূর্তে
বন্ধ হয়
সব কাজ,
ধূসর অন্ধকারে গোধূলি
জেগে ওঠে:
পশ্চিমাকাশ থেকে তখন
মৃদুস্বরে কেউ বলে -
“এটি পেছনের দিনগুলোর সাথে
করো যুক্ত,
এটি নাও আর
যাচাই করো
মূল্য বিশেষ:
এভাবে আরেকটি দিনের
হলো শেষ।”
১৭) তাই, বৃদ্ধ বয়সে এসে,
যদিও সকল বিতর্ক যায় ভেসে,
আমি পার্থক্য আর তুলনা করে বলতে
চাই শেষে,
“প্রথম জীবনের সে আবেগই ছিল সার্থক,
সবকিছু মেনে নেওয়া ছিল নিরর্থক:
ভবিষ্যতকে এখন করতে পারি গ্রহণ
যেহেতু অতীতকে করেছি পরীক্ষণ।”
১৮) মানুষ বিশেষ কিছু পায় নি
শুধুই আত্মায় প্রাপ্ত প্রাণশক্তি
ব্যতীত
যা দিয়ে সে আজ শিখে, আগামিকাল
করবে কাজ:
এমনভাবে কাজ করো
যেন কারিগরের কাজকে অনুসরণ করতে
পারো
তাতে আছে সঠিক কৌশলের ইঙ্গিত,
আছে যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার কৌশল।
১৯) মঙ্গলের জন্যই, যৌবনকে
করতে হবে চেষ্টা, অনিশ্চিত প্রচেষ্টার
মধ্য দিয়ে,
যাতে সে বানাতে পারে,
নির্ভর না করে অন্যের বানানো
জিনিসে:
তাতে বার্ধক্য, বিবাদমুক্ত থেকে,
চেষ্টার পূর্বেই বুঝতে পারে।
যৌবন অপেক্ষা করেছিলো বার্ধক্যের:
বার্ধক্য নির্ভয়ে অপেক্ষা করবে
মৃত্যুর।
২০) এটিই যথেষ্ট, যদি তুমি সত্য
এবং মঙ্গল এবং অসীমকে
বুঝতে পারো, যেমন তোমার হাতকে
তোমার নিজের বলে বুঝতে পারো,
চূড়ান্ত প্রজ্ঞা নিয়ে,
আর সুনিশ্চিত তত্ত্ব দিয়ে;
অথচ যৌবন ছিল অর্বাচিনতায় পূর্ণ,
তাই (সত্য, মঙ্গল আর অসীমকে নিয়ে)
বার্ধক্যে নিজেকে মনে করো না
তুমি একা।
২১) থাকো তুমি সেখানেই, একবার
এবং সবসময়,
আলাদা করে তুচ্ছ মন থেকে বৃহৎ
মনকে,
স্বীকৃতি দিয়ে সকল স্থানের সকল
ব্যক্তিকে!
সে কি আমি নয়, যার ত্রুটি বের
করতো সকলে?
সে কি তারা নয়, যাদেরকে
আমার আত্মা থেকে করতাম ঘৃণা?
তা কি ঠিক ছিল?
(অন্তত) বার্ধক্যে যেন সত্য বলি
আর তাতে শান্তি আসুক অবশেষে!
২২) কিন্তু, কে এর বিচার করবে?
দশজনে যা ভালোবাসে, আমি করি তা
ঘৃণা,
যা তারা এড়িয়ে যায়, তার অনুসরণ
করি আমি,
যা বাতিল করে তা করি গ্রহণ?
দশজন, যারা চক্ষু-কর্ণে আমারই
মতন:
আমরা সকলেই অনুমান করি,
তারা ওটা হলে আমি এটা:
কাকে গ্রহণ করবে আমার আত্মা?
২৩) এমন নয় যে, আমজনতার বিষয়
যাকে বলে ‘কাজ’, তাকেই করতে হবে অনুমোদন,
কৃত কাজ, দৃষ্টিগোচর হলেই হয়ে
গেলো কাজ;
যার ওপরে, সাধারণের মানদণ্ডে,
আমজনতার হাত নেমে স্পর্শ নেয়,
তা নিমিষে তাদের মনে স্থান পেয়ে
যায়,
মুহূর্তে তারা এর মূল্য নির্ধারণ
করে ফেলে:
২৪) কিন্তু সেগুলো, যা মানুষের
অঙ্গুলি-বৃদ্ধাঙ্গুলি
আঁকড়ে ধরতে ব্যর্থ হয়,
যা তারা এড়িয়ে যায়, হিসাবে নিতে
পারে না;
সমস্ত অপরিণত বোধশক্তি,
অনিশ্চিত উদ্দেশ্যগুলো,
যাকে কাজ বলা চলে না,
তবু তা মানুষের ওজনকে বৃদ্ধি
করে।
২৫) চিন্তাগুলোকে কদাচিৎ
প্রকাশ
করা যায় (দুনিয়ার)
সংকীর্ণ কাজে,
কল্পনাগুলো ভাষা হয়ে
যায় পালিয়ে;
যা-কিছু হতে
পারি নি
আমি,
যা-কিছু মানুষ
উপেক্ষা করেছে
আমাতে,
তার সবকিছু নিয়েই
আমাকে গ্রহণ
করেছেন ঈশ্বর নিরাকার,
যার (কুমোরের) চাকে
পানপাত্র পেয়েছে
আকার।
২৬) হ্যাঁ কুমোরের
চাকের রূপকটি
দেখো একবার ভেবে!
ভাবো কালের চক্র
ঘুরে কীভাবে,
কেনই বা কাদারূপ
আমি থাকি
স্থির হয়ে,
-
তুমি, যাকে মূর্খেরা
করে প্ররোচনা,
যখন নেশায় তাদের
করে প্রচঞ্চনা,
“জীবন যদি পালিয়ে যাবে,
সবকিছু যাবে
বদলে;
সবকিছু হয়ে যায়
অতীত, তবে
ধরো আজ’কে!”
২৭) নির্বোধ! যা
কিছু স্থায়ি,
থাকে চিরদিন, বদল
হয় না
তা:
দুনিয়া বদলায়, আত্মা
আর
ঈশ্বর থাকে নিশ্চল:
যা তোমাতে করেছে
প্রবেশ,
তা ছিল, আছে
আর থাকবে
অনিমেষ;
কালের চক্র ঘুরে
নয়তো থামে:
কুমোর আর মাটি
থাকে চিরকাল।
২৮) চলন্ত ধারায়
তিনি দিয়েছেন
তোমায় অস্তিÍত্ত্ব
ছিল যা আকৃতিবিহীন
বস্তু,
চলন্ত বর্তমানকে অবশ্যই
খুশি হয়ে
ধরবে তুমি:
যন্ত্রের শুধু একটিই
কাজ
আত্মাকে দেয়া সেই
সাজ,
পরখ করা আর
ঘুরিয়ে দেখা,
সন্তুষ্ট রূপে তোমাকে
রাখা।
২৯) তাতে কী
হবে, যদি
পানপাত্রের
শুরুতে থাকে কিছু
সহাস্য প্রেমদেবের
নকসা
পাত্রের নিচে (কুমোরের
হাত)
যদি না থামে,
চাপও না
দেয়?
তাতে কী হবে,
যদি পানপাত্রের
গলার দিকে থাকে
মাথারখুলির নকসা
গড়ে ওঠে (পানপাত্রের
গলা)
নিয়ে আরও ভয়ংকর
আকৃতি
মেনে নিতে হয়
(কুমোরের হাতের)
চাপ?
৩০) নিচের দিকে
তাকিয়ো না
ওপরে তাকাও তুমি!
ভোজনালয়, উজ্জ্বল বাতিদান
আর তূর্যের
ধ্বনি,
পাত্রে ফুলে ওঠেছে
নতুন পানীয়
মালিকের চকচকে ওষ্ঠদ্বয়!
স্বর্গের কাঙ্ক্ষিত পানপাত্র,
তুমি,
মাটির চাক দিয়ে
আর
কী দরকার তোমার?
৩১) কিন্তু আমার
দরকার, আগের
মতোই এখনও,
হে ঈশ্বর তোমাকে,
যে তুমি মানুষকে
গড়ে তোলো;
আর দেখো, যখন
আবর্তিত হওয়া
ছিলো কষ্টের
চূড়ান্ত,
আমি, সে চক্রের
সাথে,
সকল আকারে আর
রঙের প্রাচুর্যতায়,
যখন দিকভ্রান্ত ঘুরছি,
- তখনও ভুলিনি
গন্তব্য,
তোমার তৃষ্ণার জল
হতে:
৩২) তোমার এই
সৃষ্টিকে তাই
গ্রহণ করো
করো এর ব্যবহার:
শুদ্ধ করো যত
লুকিয়ে থাকা
ত্রুটি;
কী দাগ আছে
বস্তুটিতে;
কী বিকৃতি এর
ব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করে!
আমার সময়টুকু রইলো
তোমার হাতে!
পরিশুদ্ধ করো পানপাত্রকে
তোমার নকশায়!
বার্ধক্য মূল্য দিক
যৌবনকে,
আর মৃত্যু পূর্ণতা
দিক বার্ধক্যকে!
=======================================
*মূল কবিতা: ‘রাবাই
বিন এজরা’। ১৮৬৪ সালে
‘ড্রামাটিস পারসনাই’ গ্রন্থের অংশ
হিসেবে প্রকাশিত
হয়।
৩২ পদে
লেখা ১৯২ লাইনের কবিতাটি ৮ পদ করে ভাগ
করা হয়েছে। কবিতার
বাংলা নামটি অনুবাদকের দেয়া। ভাষাগত পার্থক্যের কারণে বাংলা অনুবাদে বেশি লাইন হয়েছে।
রবার্ট ব্রাউনিং-এর স্বভাবগত অস্পষ্টতা দূর করার জন্য প্রথম বন্ধনীতে কিছু সংযুক্তিমূলক
শব্দাবলী জুড়ে দেয়া হয়েছে, যাকে কবিতার অংশ মনে করা যাবে না।
*পটভূমি: কালোত্তির্ণ এ
কবিতাটি জীবনের
গভীর তত্ত্বে
টইটুম্বুর।
‘রাবাই বিন
এজরা’ প্রকাশিত হবার সঙ্গে
সঙ্গে সমসাময়িক
সমাজে গভীর
প্রভাব বিস্তার
করেছিল।
রাবাই ইবনে
এজরা, রবার্ট
ব্রাউনিং-এর
জীবনদর্শনের মুখপাত্র, একটি ঐতিহাসিক চরিত্র
(১০৯২-১১৬৭)। রাবাই
মধ্যপ্রাচ্যের ভাষায় রাব্বি। রাবাই
ইবনে এজরা
ছিলেন একাধারে
একজন পদার্থবিজ্ঞানী,
গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ,
দার্শনিক, কবি এবং শিক্ষক।
‘রাবাই বিন
এজরা’ কবিতায় রবার্ট ব্রাউনিং বৃদ্ধ
বয়স, জীবনের
ব্যর্থতা এবং
মহত্ব লাভের
প্রচেষ্টাকে গৌরবান্বিত করেছেন।
*কবি পরিচিতি: পিতার
পাঠাগারের সমস্ত সুবিধাকে গ্রাস করে
১৮ বছরেই
কবিত্ব বরণ
করেন রবার্ট
ব্রাউনিং (১৮১২-১৮৮৯)। প্রধানত
তিনি একজন
মানুষের কবি
(Poet of Man); মানুষকে ভালোবাসতেন এবং মানুষই
ছিল তাঁর
অধ্যয়নের বিষয়। তিনি
ছিলেন আত্মা
ও ব্যক্তিত্বের
কবি।
মানুষের চিন্তা,
অনুভূতি এবং
আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর কবিতার প্রধান
উপজীব্য।
মানব আত্মার অভ্যন্তরে ছিল তার দৃষ্টি,
তাই দক্ষতা
দেখিয়েছেন জীবনের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে (psycho-analysis)। তাঁর
কবি প্রতিভা
গেঁথে আছে
ড্রামাটিক মনোলগে (নাটকীয় এককালাপ)। কথোপকথনের
রীতিতে রচিত
তাঁর কবিতাগুলো
অমিত্রাক্ষর ছন্দে (blank verse) লেখা।
ব্রাউনিং-এর বৈচিত্রময় লেখার স্টাইলে
টিএস ইলিয়ট
(দ্য ওয়েস্ট
ল্যান্ড-এর
কবি) প্রভাবিত
হয়েছিলেন।
*অনুবাদ নাকি হনুবাদ:
পাঠক হিসেবে
যা উপলব্ধি
করেছি, প্রকাশ
করতে পেরেছি
তার খুব
কমই।
একটি ভাষাকে
কখনও উপযুক্ত
ভাবাবেগ দিয়ে
অন্য ভাষায়
অনুবাদ করা
যায় না। কবিতা
যে অনুবাদ
করা যায়
না, তা
বলাই বাহুল্য। রবীন্দ্রনাথের
গীতাঞ্জলী এজন্য কবি নিজেই অনুবাদ
করেছিলেন।
জসিম উদ্দীনের
নকসী কাঁথার
মাঠ-এর ইংরেজি
অনুবাদ দেখলে বুঝা যায়
অনুবাদ কতটুকু
সফল।
ভাষান্তর হলেও
ভাবান্তর হয়
না।
এক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
কবিতা তো
ভাবের বিষয়। আমার
প্রিয় কবিদের
একজন হলেন
রবার্ট ব্রাউনিং,
তাই তার
কবিতার একটি
জলছাপ রাখার
চেষ্টা করলাম
মাত্র।
*কৈফিয়ত: উনবিংশ শতকের
ব্রিটিশ ইংরেজির
সাথে আজকের
ইংরেজি ও
শব্দশৈলির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। অনেক
শব্দের অর্থ
ও প্রয়োগ
গেছে বদলে। বলে
রাখা প্রয়োজন
যে, অভিধান
সবসময় চূড়ান্ত
অর্থ দিতে
পারে নি,
কেবল অর্থ
নির্ণয় করায়
সাহায্য দিতে
পেরেছে, যদিও
অনেক সময়
বিভ্রান্তও করেছে অনুবাদককে।
সতর্ক পাঠকের
প্রথম দৃষ্টিতে
মনে হতে
পারে যে,
অনুবাদক শব্দের
ব্যবহারে খুব
বেশি স্বাধীনতা
নিয়েছে।
এভাবে ভুল না বুঝার জন্য নিচের কয়েকটি
উদাহরণ দিয়ে
ব্যাপারটি স্পষ্ট করার চেষ্টা করলাম:
effect এর বর্তমান
অর্থ কার্যকর
করা (৫),
কিন্তু কবিতায়
এর অর্থ
হলো সৃষ্টি
করা।
uncouth এর বর্তমান অর্থ অমার্জিত বা
অশিষ্ট (১৯),
কিন্তু কবিতায়
এর অর্থ
হলো অনিশ্চিত।
এরকম অগণিত উদাহরণ
আছে, যা
উল্লেখ করে
পাঠকের অস্বস্তি
সৃষ্টি করতে
চাই না। কিছু
শব্দ আমাদের
প্রচলিত অভিধানে
নেইও।
অবশ্য ইন্টারনেট-এর বদৌলতে
অধিকাংশ শব্দেরই
‘ইংরেজি সংজ্ঞা
এবং ব্যবহার’
বের করা
গেছে।
=======================================