Friday, October 5, 2012

ভালবাসার চারটি ধরণ


ভালবাসার চারটি ধরণ : স্নেহ মায়া মমতা, বন্ধুর সাথে হৃদ্যতা, বিপরীত লিঙ্গের সাথে প্রেম আর ঈশ্বরে আসক্তি বা ভক্তি। এই প্রকারভেদ আবিষ্কার করেছেন গ্রিক প্রেম-পণ্ডিত বা দার্শনিকগণ। 

তাদের ভাষায় প্রথমটির নাম হলো storge বা affection ‍ যার অর্থ পিতামাতার ভালবাসা বা পারিবারিক ঘনিষ্টতা। শুধু মানুষই না, সকল প্রাণীরই সন্তানের প্রতি মাবাবার বা মাবাবার প্রতি সন্তানের ভালবাসা আছে। পারিবারিক বন্ধনই স্টোর্জ বা পারিবারিক ভালবাসার মূল ভিত্তি।

দ্বিতীয়টির নাম philia বা friendship, সাধারণত সমগোত্রীয় সমবয়সী বা অভিন্ন চিন্তাচেতনার মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ককে ফিলিয়া বলে। বন্ধুত্ব অতি প্রাচীন একটি সামাজিক সম্পর্ক। সত্যিকার বন্ধু প্রেমের চেয়েও গভীর, তা যারা পেয়েছে তারা আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে। নিজের জন্য নয় বন্ধুটি যেন ভালো থাকে – এরকমের অনুভূতি থেকে এর সৃষ্টি। আমাদের সমাজে শিক্ষাজীবন বা বাল্যজীবনে এরকমের বন্ধুত্ব পেয়ে থাকি, যা কর্মজীবনের বাস্তবতায় এসে অনেকটা ফিকে হয়ে যায়। কারও কারও থেকে যায় আমৃত্যু। তারা ভাগ্যবান।

তৃতীয়টির নাম eros বা romance বাংলায় প্রেম, গভীর প্রেম। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শাশ্বত জৈবিক আকর্ষণ। এই ভালবাসা প্রলয়ংকরী এবং সৃষ্টিকারী উভয়ই। এটি ধ্বংস করতে পারে আবার অসম্ভবকে সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীর অনেক সৃষ্টি ও ধ্বংসের উৎস এই প্রেম। দার্শনিক প্ল্যাটো অবশ্য এর মাঝামাঝি এক আদর্শিক প্রেমের কথা বলেছেন, যাতে দৈহিক ঘনিষ্টতাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, যাকে আমরা বলে থাকি প্ল্যাটোনিক প্রেম। আবার সিগমান্ড ফ্রয়েড সেটাকে অস্বীকার করে গেছেন।

চতুর্থটির নাম agape বা unconditional love। ঈশ্বরের সাথে শর্তহীন সম্পর্কের নামকে বলা হয় আগাপে অন্য ভাষায় charitable love। আমাদের সুফিবাদ অনেকটা এর কাছাকাছি। ঈশ্বরের অস্তিত্বে দেহ-মন-শরীরে গ্রহণ করে পরম একাত্মতা বোধ করার নামই আগাপে বা খোদা-প্রেম। নজরুল গেয়েছেন, “খোদারও প্রেমে সরাবও পিয়ে…বেহুঁস হয়ে রই পড়ে।” ঈশ্বরবাদীদের মতে, এ-ই হলো সর্বোত্তম প্রেম, যা আমাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে স্বজাতিকেও ভালবাসতে শক্তি যোগায়। মাদার তেরিজা বলেছিলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যে আমি ঈশ্বরকে দেখতে পাই।

No comments:

Post a Comment